আসাদুজ্জামান নূর। যার জীবনটাই ফ্রেমবন্দী হয়েছে অভিনয়ের ক্যানভাসে। মঞ্চ, নাটক, সিনেমা কিংবা রাজনীতি সব জায়গাতেই তিনি হয়েছেন সফল। সম্প্রতি ৭৩ পেরিয়ে ৭৪-এ পা দিয়েছেন এই কিংবদন্তি। রাজনীতির কারণে দীর্ঘদিন চলচ্চিত্রের আঙিনা থেকে দূরে থাকলেও আবারো ফিরেছেন নিজের চেনা জগতে। সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হতে যাওয়া ‘গাঙচিল’ সিনেমার শুটিং এ অংশ নিয়েছেন তিনি। আর এই শুটিং এর মাঝেই তিনি কথা বলেছেন নিউজ টোয়েন্টিফোরের রিপোর্টার ফাতেমা কাউসারের সঙ্গে। আলাপচারিতায় উঠে আসে কেনো এই দীর্ঘ বিরতি, অভিনয় নিয়ে তার ভাবনা। সেই সাথে এই পেনডামিক প্রসঙ্গও।
আসাদুজ্জামান নূর: ক্যামেরার কথাতো মনেই পড়ছে না। এমনিতে অন্যান্য অনুষ্ঠান করেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে বিটিভির একটা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছি। কিন্তু চলচ্চিত্র কিংবা নাটকের কথা বললে সেটা অনেকদিন। সর্বশেষ নাটক করেছি মনে হয় দুবছর আগে। আর সিনেমার কথা যদি বলি তাহলে বলবো হুমায়ুন আহমেদের পরতো আর কোনো সিনেমাই করি নাই। মাঝখানে শিকলবাহা করলাম তারপর এই গাঙচিল।
আসাদুজ্জামান নূর: খুব মিস করি বলেই আবারো মঞ্চে ফিরেছিলাম। গ্যালিলিও নাটকটা করলাম। কিন্তু আলি যাকের অসুস্থ হয়ে যাওয়াতে আর সেটা হলো না। পরে করলাম উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের লেখা ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ‘কালো জলের কাব্য’ নাটকটি। সেটার দুইটা প্রদর্শনী হলো। পরেতো করোনার জন্য তাও বন্ধ হয়ে গেলো।
আসাদুজ্জামান নূর: অনেকদিন ধরেই এই সিনেমা করার কথা। বিশেষ করে পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদেরের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হচ্ছে। তো এখানে শুধু অভিনেতা হিসেবে নয় দলের একজন কর্মী হিসেবে বাধ্যবাধকতাতো থাকে। করোনাসহ নানা জটিলতায় কাজটি পিছিয়ে গেলো। রাজনীতিবিদের চরিত্রে অভিনয় করছি। আমার একজন প্রাক্তন শিক্ষক আর একজন সাংবাদিকের সাথে আমার কথপোকথন থাকে এই।
আসাদুজ্জামান নূর: নাটক এবং সিনেমা একটু আলাদা করে বলতে চাই। কিছু ব্যতিক্রমী কাজ ছাড়া নাটকের অবস্থা আমার কাছে খুব খারাপ মনে হয়েছে। গল্প দুর্বল, আর গল্প দুর্বল হওয়ার কারণে যারা অভিনয় করছেন তারাও তাদের পুরোটা দিতে পারেন না। আরেকটা সমস্যা যারা প্রডিউসার তারা অল্প টাকায় নাটক বানাতে চান এভাবেতো আসলে ভালো নাটক হয় না। নাটকের ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহ পাই না। মন্ত্রীত্ব শেষ হওয়ার পরে অনেকেই নাটকের স্ক্রিপ্ট নিয়ে এসেছে। যার ৯৫ ভাগ গল্পই একজন বয়স্ক মানুষের সঙ্গে তরুণীর প্রেম। এ নাটক আমার পক্ষে করা মুশকিল। তাও যদি গল্পের ভেতর একটা গভীরতা থাকে সেটা একটা বিষয়। চলচ্চিত্র বরং তুলনামূলক ভালো। অনেক নির্মাতা নতুন নতুন ভাবনা নিয়ে আসছে।
আসাদুজ্জামান নূর: এর কারণ অশ্লিল সিনেমা। অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক নির্মাতা, অভিনয়শিল্পীরা সরে গেছে। তারা আসলে তাদের মেলাতে পারেনি। ঢাকারও অনেক হল বন্ধ হয়ে গেছে। আমার মনে হয় সরকার যদি সব শপিং সেন্টারে বাধ্যতামূলক করে দেয় সিনেপ্লেক্স থাকতে হবে। তাহলেই দর্শক আগ্রহ পাবে আবারও হলে আসবে।
আসাদুজ্জামান নূর: তদবিরের সিনেমা হয় কিন্তু খুব বেশি যে হয় তা কিন্তু নয়। অনেকে আবার সিনেমার কাজ শেষও করেন না তবে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে এটি যেমন সত্য আবার এও সত্য পাহারা দিয়েতো আর সৃজনশীল কাজ হয় না। এখানে যারা অনুদান নেন তাদের আরেকটু দায়িত্বশীল হতে হবে।
আসাদুজ্জামান নূর: ‘শিকলবাহা’ সিনেমায় একজন প্রবীণ বিপ্লবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছি। ৯০ বছর বয়সী চরিত্র যার মেকাপ নিতেই আমার তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগতো। যদিও আমার মনে হয়েছে আমি খুব একটা ভালো করিনি। নির্মাতা বলছেন ভালো হয়েছে। জানি না কেমন।
আসাদুজ্জামান নূর: আমার কাছে মনে হয় প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দেওয়া যে তোমার সময় শেষ। ঘটা করে জন্মদিন আমার কোনোদিনই করা হয় না। পরিবারের লোকজন ছাড়া আর তেমন কেউ থাকে না। জীবনের থেকে একটা সময় চলে গেছে মনে করলেই মনে হয় অনেক সময় নষ্ট করেছি।
আসাদুজ্জামান নূর: এই পৃথিবীটা যে মানুষের একার নয়, তা বুঝিয়ে দিয়েছে করোনা। আর এটাই মনে হয় সবচেয়ে বড় শিক্ষা।
আসাদুজ্জামান নূর: ওনার সাথে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক। বিভিন্ন সময়ে তার সাথে আমার দেখা হয়েছে। বিশেষ করে দুই বাংলার সরকারের পক্ষ থেকে আয়োজিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনে। খুব ভালো অভিনেতা। আমি বলব মেদহীন অভিনয়। আমি এরকম অভিনয় খুব কম মানুষের দেখেছি।